রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে চেয়ারম্যান করে ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। চেয়ারম্যানসহ নতুন পর্ষদে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকে নতুন নিয়োগ করা অন্য স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন—বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল জলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এম মাসুদ রহমান এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মো. আবদুস সালাম।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিত করতে জনস্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে গঠন করতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের নিয়োগ দিয়েছে। অপরদিকে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ৪৭ এর উপ-ধারা (১) এবং ধারা ৪৮ এর উপ-ধারা (১)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ইসলামী ব্যাংকের আগের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সরকারের সহযোগিতায় স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে বোর্ড গঠন করা হবে। এখন ইসলামী ব্যাংকে এস আলম গ্রুপ বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি-প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারো নামে এককভাবে ২ শতাংশ শেয়ারধারী নেই। তাই, পরবর্তীতে যখন কোনো শেয়ারহোল্ডার ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবেন, তখন তাদের মধ্যে থেকে পরিচালক নিয়োগ দিয়ে আবার পরিচালনা পর্ষদ পুনঃগঠন করা হবে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে ঋণকেলেঙ্কারি, দখল, লুটপাট ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। ইসলামী ব্যাংকসহ প্রায় আটটি ব্যাংক দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ। এসব ব্যাংক দখলে নেওয়ার পর থেকে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয় এস আলম গ্রুপ। শুধু ঋণ নয়, এসব ব্যাংকের মালিকানা নিজেদের কব্জায় রাখতে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে শেয়ার ধারণ করেছে প্রভাবশালী গ্রুপটি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে হঠাৎ করে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করার পর ইসলামী ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা সরাতে গিয়ে ব্যর্থ হয় এস আলম গ্রুপ। পরে গ্রুপটি তাদের নামে-বেনামে থাকা শেয়ার বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রভাবশালী এই গ্রুপটির শেয়ার বিক্রি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীরা। এর পরপরই এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকে থাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের ২৫ সদস্যের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এবার ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন গঠন করে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
পাঠকের মতামত